![]() |
আমড়া একটি জনপ্রিয় ফল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমড়ার প্রায় তিনটি আপেলের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আমড়ার আপেলের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। আমড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়। এছাড়া আমড়া থেকে সুস্বাদু আচার, চাটনি ও জেলি তৈরি করা যায়। মুখের রুচি বাড়ানো সহ আমড়ার রয়েছে অসংখ্য গুণ। আজ আমরা জানবো আমড়ার কিছু আশ্চর্যজনক পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
এখন বাজারে আপনি সহজে এবং সস্তায় সুস্বাদু ফল আমড়া পাবেন। এটি সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়। এছাড়া আমড়া থেকে সুস্বাদু আচার, চাটনি ও জেলি তৈরি করা যায়। মুখের রুচি বাড়ানো সহ আমড়ার রয়েছে অসংখ্য গুণ। আসুন জেনে নেই এর কিছু পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
আমড়ার পুষ্টিগুণ:
আমড়া একটি সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় দেশীয় ফল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমরান্থে আপেলের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন থাকে। এছাড়াও, এতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। ১০০ গ্রাম আমড়া খাওয়ার ফলে ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.১০ গ্রাম প্রোটিন এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিটামিনের মধ্যে ০.২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। আমড়ার খাদ্য শক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি। খনিজ বা খনিজ পদার্থের পরিমাণ ০.৬ গ্রাম।
আমড়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
গ্রীষ্মকালে রাস্তার ফল বিক্রেতাদের ভ্যানে ফুলের মতো কেটে সাজানো আমড়া দেখতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে জল আসে। তবে এসব রাস্তার খাবার না খেয়ে ঘরেই ধুয়ে ধুয়ে খেতে হবে। আমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি হজমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। এছাড়া এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। তাই কোনো সমস্যা ছাড়াই খেতে পারেন ফলটি। নিচে আমড়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ভিটামিন সি এর অভাব দূর করতে:
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বক, লিগামেন্ট, টেন্ডন এবং তরুণাস্থি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। প্রতিদিন একটি আমড়া খেলে ভিটামিন সি-এর চাহিদা ৩৯%-৪৯% পূরণ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ৪৬.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে যা একটি অপরিহার্য ভিটামিন এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমড়ার ভিটামিন সি শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। আমড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খেলে স্কার্ভি প্রতিরোধ করা যায়।
বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে:
আমড়ার বিভিন্ন দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এই ফাইবার পাকস্থলীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। তাই বদহজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অস্বস্তিকর রোগ থেকে বাঁচতে আমড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্দি কাশি, ইনফ্লুঞ্জার সংক্রমণ এড়াতে:
আমড়া বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সর্দি, কাশি এবং ইনফ্লুঞ্জার জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলস্বরূপ, আপনি সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।
মুখের রুচি ও ক্ষুধা বাড়ায়:
আমড়ার কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে। এটি পিত্তনাশক এবং কফনাশক। আমড়া খাওয়া মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে, ক্ষুধা বাড়াতেও সাহায্য করে।
ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে:
ক্যালসিয়ামের অভাব হাড়ের রোগ, পেশীর খিঁচুনি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আমড়া ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। তাই প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে আমড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুর শারীরিক গঠনেও ক্যালসিয়াম খুবই উপকারী। তাই শিশুদের এই ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারেন।
আয়রনের অভাব দূর করতে:
লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা দৈনিক আয়রনের প্রয়োজনের ১৫.৫%-৩৫%। হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে এই ফলটির ভূমিকা রয়েছে, যা প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শরীরের সঠিক কাজ করার জন্যও আয়রন প্রয়োজন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা:
আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা ডায়েটারি ফাইবার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২৯ ক্যালরি রয়েছে। তাই আমড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমড়া বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে:
আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে আমড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খাওয়া সার্বিক হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
রক্তশূন্যতা নিরাময়ে:
রক্তশূন্যতা দূর করতে আমড়া খাওয়া উচিত। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে এটি রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ত্বক সুস্থ রাখতে:
আমড়া ফল ত্বক, চুল ও নখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমড়া ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে খুবই উপকারী। আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে অপরিহার্য। তাই ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে নিয়মিত আমড়া খাওয়া যেতে পারে।
আমড়া আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। আমড়া ফলকে মজাদার ফল বললে ভুল হবে কারণ এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এর উপকারিতা অফুরন্ত। তাই আপনি চাইলে আপনার বাড়ির আশেপাশে দু-চারটি আমড়া ফলের চারা লাগিয়ে পরিবারের সকলের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করতে পারেন।
রেফারেন্স: daktarbhai.com