![]() |
Wikimedia Commons |
শীতের বাজারে অনেক ধরনের পুষ্টিকর সবজি দেখা যায়। তার মধ্যে গাজর অন্যতম। এই গাজর শরীরের সমস্ত শক্তির উৎস। আসুন জেনে নেই এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
গাজর এর উপকারিতা
গাজর দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি গাজরের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। গাজর আমাদের শরীরের সুস্থতায় খুবই কার্যকরী। পুষ্টিকর এই সবজিটিও সহজলভ্য। গাজর কাঁচা ও রান্না করে খাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই গাজরের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা-
১. শীতকালে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। গাজর খেলে ত্বকের পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
২. গাজরে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল চুল পড়া রোধে কার্যকর। গাজর চুল পড়া কমায়, চুল শক্ত ও মজবুত করে।
৩. গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ করে।
৪. এই সবজিটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। তাই এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫. আলফা ক্যারোটিন সহ এই সবজির অন্যান্য উপাদান হৃৎপিণ্ড ও হৃদপিণ্ডের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৬. গাজরের উপকারী উপাদান ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ভালো হয়।
৭. গাজর দাঁত রক্ষা করে। দাঁত পরিষ্কারের কাজ করার পাশাপাশি এটি দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস জমতেও বাধা দেয়।
৮. গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য গাজর খুবই ভালো সবজি। গাজরের রস শিশুর জন্ডিসের ঝুঁকি কমায়।
১০. যারা দীর্ঘদিন ধরে পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা গাজরে সমাধান খুঁজে পেতে পারেন, এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যও একটি ভাল প্রতিকার।
১১. এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। সবজিটি শরীরের যেকোনো ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে দেয়। এছাড়া এটি যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়াই করে।
১২. এটি একটি কৃমিনাশক হিসাবে পরিচিত হয়. নিয়মিত গাজর খেলে পেটের কৃমির ঝুঁকি কমবে।
১৩. গাজরে ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্ট থাকে। এই উপাদানটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
১৪. গাজর খেলে আপনার পেট ভরবে এবং আপনার শরীরে বেশি ক্যালোরি যোগ হবে না। তাই ওজন কমাতে বেশি করে গাজর খেতে পারেন।
১. ত্বকের যত্নে
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যা সুন্দর ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের অবাঞ্ছিত ভাঁজ, কালচে দাগ, ব্রণ, অমসৃণ স্কিন টোন ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন এ-এর দৈনিক চাহিদা মেটাতে আপনি নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
২. দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে:
গাজর হল বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারে যাওয়ার পর বিটা-ক্যারোটিন ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়।এই ভিটামিন চোখের রেটিনায় পৌঁছে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি চোখে বেগুনি রঞ্জকের সংখ্যা বাড়িয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখে। যারা রাতের অন্ধকারে ভালোভাবে দেখতে পান না তারা এই সমস্যা দূর করতে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
৩. দেহের পুষ্টি ও বুদ্ধির বিকাশে
গাজর খাওয়া শরীরের পুষ্টি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। অন্যান্য সবজির মতো গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আলু বা ভুট্রার তৈরি ক্ষতিকর চিপস না খেয়ে গাজরের হালুয়া ও অন্যান্য সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন।
৪. বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে:
শীতকালে সর্দি, সর্দি-কাশি ইত্যাদি লেগেই থাকে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব হলে শরীর রোগাক্রান্ত হয়, শারীরিক বৃদ্ধি ও ক্ষমতা কমে যায়, খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। গাজরে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শরীরের বিভিন্ন রোগ দমনে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
৫. বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধ:
বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে গাজর খুব ভালো কাজ করে। এতে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড বিভিন্ন হৃদরোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। গাজর নিয়মিত সেবন ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের হৃদরোগ আছে তারা বিনা দ্বিধায় গাজর খেতে পারেন।
৬. দাঁত সুন্দর ও সুস্থ রাখতে:
সুন্দর ও সুস্থ সবল দাঁতের জন্য গাজর জুড়ি নেই। গাজর দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া গাজরে থাকা খনিজ উপাদান দাঁত মজবুত রাখতেও সাহায্য করে।
৭. লিভারের যত্নের জন্য গাজর
গাজরে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ' লিভারে যায় এবং শরীর থেকে টক্সিনের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিতে এবং লিভারের অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে সাহায্য করে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ একটি সবজি যা কোলন পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি শরীরকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই লিভার সুস্থ রাখতে নিয়মিত গাজর খান।
৮. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে:
নিয়মিত গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। গাজরে ফ্যালকারিনল এবং ফ্যালকারিন্ডিওল নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যকে শক্তিশালী করে। তাই নিয়মিত গাজর খান এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকুন।
গাজরে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। এর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এর রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। তাই সেসব উপকারিতা ভালোভাবে জানা দরকার। তাই শরীর সুস্থ রাখতে খাবার তালিকায় অবশ্যই গাজর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
রেফারেন্স: daktarbhai.com