আসুন সাধারণ থানকুনি পাতার আসাদোরণ ও বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জেনে নেই
![]() |
থানকুনি পাতার ছোট গোল আকৃতির অনেক ভেষজ ও ঔষধি গুণ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এই পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। রোগ নিরাময়ে এই পাতার রস অতুলনীয়। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে তার মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার কিছু আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
হজম উন্নতি করতে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় একাধিক পাচক উপাদান রয়েছে যা শরীরে অ্যাসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে শরীরে খাবার সঠিকভাবে হজম হয়। ফলে শরীরে বদহজম বা গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে না। এছাড়া থানকুনি পাতা শরীরে হজমশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুল পড়া কমাতে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন থানকুনি পাতা খান তাদের মাথার ত্বকের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত পুষ্টির কারণে মাথার চুল পড়া অনেকটাই কমে যায়। তাই যাদের চুল পড়ার সমস্যা আছে তারা তা কমাতে থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কিছু থানকুনি পাতা গুঁড়ো করে তাতে পরিমাণ মতো তুলসী পাতা ও আমলা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্টটি চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। প্রায় ১০ মিনিট পর চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করলে অবিশ্বাস্য উপকার পাবেন।
শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত রাখতে
ক্ষতিকারক টক্সিন বিভিন্ন উপায়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এই বিষাক্ত পদার্থগুলি রক্তে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। তাই কেউ যদি প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান, তাহলে তার রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকারক উপাদান বেরিয়ে আসবে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করবে।
শরীরের ক্ষত চিকিৎসায়
থানকুনি পাতায় স্পিওনিনসহ অন্যান্য উপকারী উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্ষত প্রতিরোধে খুবই সহায়ক। তাই শরীরের কোথাও দুর্ঘটনাবশত কেটে গেলে সেখানে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতা পেঁচিয়ে লাগালে ক্ষত খুব দ্রুত সেরে যাবে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে
থানকুনি পাতায় অ্যামিনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা ত্বকের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে। এই উপাদানগুলো ত্বকে পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের তেজ বাড়ে, ফলে ত্বকের অকাল বার্ধক্যের সম্ভাবনাও কমে।
আমাশয় সমস্যা দূর করতে
আমাশয় নিরাময়ে থানকুনি পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর জন্য টানা ৭ দিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতা খেতে হবে। পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে সেই রসের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে দুই চামচ করে দিনে দুবার খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পেটের অসুখের সাথে ক্রিমি প্রতিরোধ
যে কোনো ধরনের পেটের অসুখ সারাতে অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল, ১টি আনারস পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভালো করে মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করলে কয়েকদিনেই এই ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ক্রিমির প্রকোপ কমাতেও এই মিশ্রণের ভূমিকা অতুলনীয়।
কাশির প্রকোপ কমাতে
কাশির প্রকোপ কমাতে থানকুনি পাতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই ২ চা চামচ থানকুনি পাতার রসে অল্প পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেলে কাশি খুব দ্রুত কমে যায়। আর যদি সপ্তাহে একবার খেতে পারেন, তাহলে প্রচণ্ড কাশির সমস্যাও সেরে যাবে।
জ্বরের প্রকোপ কমাতে
জ্বরের প্রকোপ কমাতেও থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের সময় নিয়মিত ১ চামচ থানকুনি ও ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়। এটি শারীরিক দুর্বলতা কমাতেও সাহায্য করবে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সারাতেও থানকুনি পাতা খুবই সহায়ক। এই ক্ষেত্রে, একটি ঘরোয়া প্রতিকার কাজে আসে। এজন্য আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিসরি ও অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ উপকার পাবেন।
থানকুনি আমাদের দেশের একটি পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ যা সর্বত্র সহজলভ্য। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই পাতার অবদান অপরিসীম। এটি সব ধরনের পেটের রোগের জন্য একটি দুর্দান্ত ওষুধ। থানকুনি পাতার রস বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। তাই সুস্থ থাকতে সবাইকে নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রেফারেন্স: daktarbhai.com