![]() |
সুষম খাদ্য কি?
সাধারণত খাবারে ছয়টি পুষ্টি উপাদান থাকে। মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানের পরিমাণকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য বলতে শর্করা, চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও পানি সমৃদ্ধ খাবার। এর
মধ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ কে খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তিনটি উপাদান নিশ্চিত করা গেলে মারাত্মক অপুষ্টির সমস্যা এড়ানো সম্ভব। শরীরের ক্যালরির চাহিদা বয়স এবং ব্যায়ামের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলার দৈনিক প্রয়োজন যথাক্রমে ২৫০০-৪০০০ কিলোক্যালরি এবং ১৮০০-৩০০০ কিলোক্যালরি । তাই প্রোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রতিদিন সুষম খাবার খাওয়া উচিত।কিভাবে সস্তায় সুষম খাদ্য পাওয়া যায়?
অনেকে মনে করেন শুধু দামি খাবারেই সব পুষ্টি থাকে। কিন্তু তাদের চারপাশে সুষম খাবারের বিশাল সরবরাহ রয়েছে। কোন খাবারে কতটা এবং কী ধরনের খাদ্য উপাদান ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকাটা জরুরি। সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কিভাবে সহজে এবং সস্তায় পাওয়া যায় সে বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। শর্করা জাতীয় খাবারের সহজ উৎস:
২. আমিষ খাবারের সহজ উৎস:
আমিষ খাবার আমাদের শরীর গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। মাংসের চাহিদা শরীরের ওজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যাইহোক, একটি সাধারণ নিয়ম হিসাবে, প্রতিদিন প্রতি কিলোগ্রাম শরীরের ওজনের জন্য ০.৮৩ গ্রাম আমিষ খাবার প্রয়োজন। আমিষ খাদ্যের প্রধান উৎস হল মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটর ডাল, তিল, কাঁঠালের বীজ, বাদাম ইত্যাদি।তবে মাছের মাংসে আমিষ বা প্রোটিনের অভাব দূর করতে সব ধরনের ডাল, শিমের বীজ, কুমড়ার বীজ, দেশি ফল ইত্যাদি খেতে হবে।
৩. স্নেহের সহজ সরবরাহ:
স্নেহ জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। এর শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা চিনিযুক্ত খাবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। স্নেহের খাবারের প্রধান উৎস হল বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি। তবে, আমরা আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় তেলের প্রয়োজনীয় তেলগুলি সস্তা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখী তেল, চীনাবাদাম ইত্যাদি থেকে সহজেই পেতে পারি। .
৪. ভিটামিনের সহজ উৎস:
আমাদের শরীরে ভিটামিনের খুব প্রয়োজন। কারণ এটি শরীর সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। সব ধরনের ভিটামিন সহজে পেতে হলে খেতে হবে সবুজ শাকসবজি, পাকা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, সজনে পাতা, মুলা ইত্যাদি।এছাড়া বিভিন্ন টক ফল যেমন- আমলকি, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু, ইত্যাদি প্রচুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
৫। খনিজ পদার্থের সহজ উৎস:
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই 'ট্রেস এলিমেন্টস', শরীরের ওজনের মাত্র ০.০১% উপস্থিত, শরীরের বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন এবং টিস্যুর অংশ। তাই এগুলো শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। সবুজ শাকসবজি, তাজা ফল, দুধ, ডিম, ডাল, মাংস ইত্যাদিতে এই খনিজগুলো প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন উপাদান পেতে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ, শুকনো খাবার, শুকনো ফল খেতে হবে। , সরিষা, সবজি, সবুজ শাকসবজি, কলার মোচা, কাঁচা সবজি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬. জল:
একজন মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা তার বয়স, ওজন, পরিশ্রম, ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৮-১০ গ্লাস (৩-৫ লিটার) পানি পান করা প্রয়োজন। রক্তকে তরল রাখতে এবং দূষিত পদার্থ বের করে দিতে পানির ভূমিকা অপরিসীম। পানির অভাব মেটাতে বিশুদ্ধ পানিই যথেষ্ট। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
খাদ্যই মানব জীবনের প্রধান ভিত্তি ও সহায়ক। সুস্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু বজায় রাখতে ভালো পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভালো খাবার খাওয়ার পরও যদি তা ভালোভাবে ভারসাম্যপূর্ণ না হয় তবে তা কাঙ্খিত ফল দেবে না। তাই প্রত্যেকেরই জানা দরকার যে কোন খাবারে কি কি উপাদান থাকে।
রেফারেন্স: daktarbhai.com