![]() |
Public Domain Pictures |
সবচেয়ে সাধারণ মাথাব্যথা শুরুতেই জানা উচিত। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে ৭৮ জন তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মাথাব্যথায় ভোগেন।
মাথাব্যথা প্রায়ই উদ্বেগের কারণে হয়। তবে আরও অনেক কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। আসুন জেনে নিই সেই কারণগুলো কি।
১. ঘুমের কারণে মাথাব্যথা: আপনি সারা সপ্তাহে দিনে ১০ঘন্টা কাজ করেন এবং সুস্থ বোধ করেন, তবে ছুটির দিনে দীর্ঘ ঘুমানোর পরে মাথা ব্যথা নিয়ে জেগে ওঠেন। এর কারণ হলো, হঠাৎ করে মানসিক চাপ কমে গেলে মাথায় এক ধরনের হরমোন কমে যায়। আপনার যদি এমন মাথাব্যথা হয় তবে আতঙ্কিত হবেন না। এটা শুধু আপনার একা ঘটবে না.
সমাধান: ছুটিতে অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রলোভন প্রতিহত করুন যদি আপনার থাকে। আট ঘণ্টার বেশি ঘুমালে এই মাথাব্যথা হতে পারে। মাথা ব্যাথাটা বেশি ছিল।
২. ঘুমের অভাবে মাথাব্যথা হতে পারে: অনেকেরই কম ঘুমালে মস্তিষ্কে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। হালকা মাথাব্যথা অনুভূত হয়। তাহলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। আর ঘুম কম হলে বারবার মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমান।
৩. কিছু খাবার: চা, কফি, কোলা বা কোমল পানীয় এই ধরনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
সমাধান: আপনি যদি এই পানীয়গুলি পান করার পরে নিজেকে হালকা মাথা অনুভব করেন তবে সেগুলি কম পান করুন।
৪. কম জল পান করা: আপনি যে পরিমাণ জল গ্রহণ করেন তার চেয়ে বেশি জল শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মাথাব্যথা হতে পারে। আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কখন শরীরে পানির ঘাটতি হচ্ছে। শুধু বমি বা ডায়রিয়া নয়। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণেও পানিশূন্যতা হতে পারে।
সমাধান: দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করুন। মাথাব্যথা শুরু হলেও প্রচুর পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৫. কোনো খাবার না খাওয়া: অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া বা খাবার না খাওয়ার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। আমরা যে খাবার খাই তা থেকে শরীর এক ধরনের চিনি তৈরি করে। এটি মস্তিষ্কের খাদ্য। না খেলে এই সুগার রক্তের সাথে কমে যায়। এবং এটি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। আমি যে চিনির কথা বলেছি তা চা তৈরির চিনির মতো নয়।
সমাধান: কোনো খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। মাথাব্যথা থাকলেও সময়মতো খাবার খেতে হবে।
৬. সারাদিন শুয়ে থাকা: আপনার পরিশ্রম কম হলে মাথাব্যথা হতে পারে। আপনি সমাধান বুঝতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
৭. স্ট্রেস: এটি একটি খুব সাধারণ কারণ। কোনো কিছু নিয়ে চাপের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই আপনি যে বিষয়ে টেনশন করছেন তা সমাধান করতে হবে।
মাথা ব্যথার ওষুধ:
ওষুধ খাওয়ার আগে একটা জিনিস জেনে নিন। আপনার মাথাব্যথা কি অন্য কারণে হয়? যেমন মাইগ্রেনের মাথাব্যথা। কিভাবে বুঝব? আমরা যে ধরণের উদ্বেগ মাথাব্যথার কথা বলছি তার হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা রয়েছে। ব্যথা খুব তীব্র নয়। দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথার সময় সাধারণত বমি বমি ভাব বা বমি হয় না। হাঁটলে মাথা ব্যথা উপশম হয় না। এগুলো থাকলে মাইগ্রেশনের কারণে মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়াও এই দুটি ব্যথা মাথার বিভিন্ন জায়গায় হয়। দুশ্চিন্তা ধরনের ব্যথা সাধারণত মাথার দুই পাশে হয়। ব্যথাটা মনে হয় মাথায় চেপে যাচ্ছে। কারও কারও কাছে এটি টুপির মতো শক্ত হয়ে বসে। কারো কারো মাথায় ভারী ভার। সাধারণত ব্যথা মাথার সামনে থেকে পিছনে এবং ঘাড় পর্যন্ত যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি মাথার যে কোনও জায়গায় হতে পারে।
অন্যদিকে মাইগ্রেনের ব্যথা ভিন্ন। ব্যাথাটা কাঁপছিল। একটি রক্তনালী সংকুচিত এবং প্রসারিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
পার্থক্যটা বুঝলাম। এখন বলছি দুশ্চিন্তা ধরনের মাথাব্যথার ওষুধ কতক্ষণ খেতে হবে। এই ধরনের মাথাব্যথা কমাতে ১০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল কার্যকর। আমাদের দেশে সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল পাওয়া যায়। যদি এটি একটি ৫০০মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হয়, ২ নিন।
কখন খাবেন মাথাব্যথা চলে গেলে এই ওষুধটি খাবেন না। মাথাব্যথা অব্যাহত থাকলে, আপনি প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা খেতে পারেন। তবে সতর্ক থাকুন যাতে দিনে ৮ টির বেশি ট্যাবলেট না খাওয়া যায়। এই পরিমাণ ওষুধ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য। যাদের অন্য কোনো রোগ নেই, তাদের শরীরের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি। আপনার ওজন ৫০ কেজির নিচে হলে বা অন্য কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ খান।
এ পর্যন্ত বলেছি সবচেয়ে সাধারণ মাথাব্যথার কারণ ও সমাধান। এখন আমি আপনাকে কিছু ধরণের মাথাব্যথার কথা বলব, যা অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
১. ঘন ঘন মাথাব্যথা বা তীব্র মাথাব্যথা।
২. ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরও যদি মাথাব্যথা না যায় এবং আরও খারাপ হতে থাকে।
৩. সামনের দিকে বা মাথার একপাশে একটি তীক্ষ্ণ থ্রবিং ব্যথার কারণে ব্যথা স্থানান্তরিত হতে পারে। অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস্টার মাথাব্যথা হতে পারে।
৪. মাথাব্যথা বা হালকা এবং শব্দের সাথে বমি বমি ভাব হলে ব্যথা হয়। আগেই বলেছি মাইগ্রেন হতে পারে।
৫. আপনার বয়স চল্লিশের বেশি হলে। আগে কখনো মাথাব্যথা ছিল না, এখন আবার শুরু হচ্ছে। এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৬. আপনার স্বাভাবিক মাথাব্যথার ধরণে পরিবর্তনও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
যেই লক্ষণ গুলো আমি উল্লেখ করেছি। শুধু এগুলিই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে না। এটি অনেক কারণে ঘটতে পারে। তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা প্রয়োজন।
এবার আরও কিছু মাথাব্যথার কথা বলা যাক, যা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। এটা কোনোভাবেই বিলম্বিত করা যাবে না। এই মাথাব্যথার ধরন কি কি?
১. যদি মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হয় এবং ব্যথা খুব তীব্র হয় বা যদি মাথাব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে আপনার জীবনে আগে কখনও হয়নি। এগুলো ব্রেন হেমারেজের লক্ষণ।
২. মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দুর্ঘটনা বা পতনের ফলে।
৩. যদি গুরুতর মাথাব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকে যেমন: হঠাৎ কথা বলতে বা চিন্তা করতে অসুবিধা, বা বাহু বা পায়ে দুর্বলতা, অলসতা, এগুলো স্ট্রোকের লক্ষণ।
৪. যদি আপনি অলস বা অসংলগ্ন হন, বা জ্বর বা ঠান্ডা লাগা, ঘাড় শক্ত হয়ে থাকে বা ফুসকুড়ি হয়। এগুলো মস্তিষ্কের সংক্রমণের লক্ষণ। খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়া মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের লক্ষণ। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেলে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেলে বা দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
৫. খাওয়ার সময় চোয়ালের ব্যথা তীব্র মাথাব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা বা ডবল দৃষ্টি সহ। মাথার ত্বকে চাপ অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে যান। মাথা এবং ঘাড়ের রক্তনালীগুলির প্রদাহের কারণে এগুলি ঘটতে পারে। এক বা উভয় চোখে অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে।
রেফারেন্সঃ-
doctortv.net