মলাশয়ের কোলন ক্যান্সার এর লক্ষণ ও চিকিৎসা জেনে নিন
কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি নির্ণয় করা যায় এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তাহলে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে।
সাধারণত, পুরুষ এবং কৃষ্ণাঙ্গরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। পেরুতে বয়স ৫০ পার হলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে, ইদানিং অল্প বয়সে আক্রান্ত যুবকদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আক্রান্ত হওয়ার কারণ
পরিবেশগত এবং জেনেটিক কারণে বৃহদন্ত্র এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গরুর মাংস বা ছাগলের মাংসের অতিরিক্ত ব্যবহার, খাদ্যে আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান এবং মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থূল ব্যক্তিদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম (বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বৃহদন্ত্র এবং কোলন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে যদি মা, বাবা, ভাই, বা বোনের বৃহদন্ত্র এবং কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে তবে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
এছাড়াও, প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত রোগীদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
রোগের লক্ষণ
=> প্রাথমিকভাবে, কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ প্রথমে রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না।
=> কোলন বা মলদ্বারে কোথায় ক্যান্সার আছে তার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলি পরিবর্তিত হয়।
=> মলত্যাগের সঙ্গে রক্ত বা পেটে ব্যথার বেশিরভাগ রোগী প্রথমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
=> মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন (কখনও কখনও ডায়রিয়া, কখনও কখনও কষা), রক্তাল্পতা (দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) ইত্যাদি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
=> যদি অবস্থা গুরুতর হয় – রোগীরা অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া, পেটে খিঁচুনি, পেটে পানি, কাশির সঙ্গে রক্ত উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
=> দুর্ভাগ্যবশত, আমরা রোগীদের অতিমাত্রায় আক্রান্ত অবস্থায় রোগীদের খুঁজে পাই যাদের অধিকাংশই পূর্বে ভুল চিকিৎসার শিকার ছিল।
রোগ নির্ণয়
=> প্রধান উপাদান হল কোলন্সকোপি এবং বায়োপসি। বায়োপসির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর ক্যান্সারের পর্যায়টি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় যেমন সিটি স্ক্যান, রক্তে অ্যান্টিজেনের (CEA) পরিমাণ ইত্যাদি।
=> চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধাপের নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে (Stage I এবং II) ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল সন্তোষজনক, যেখানে গুরুত্বর পর্যায় (Stage III এবং IV) ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়।
=> একবার ক্যান্সার কোলন এর বাইরে ছড়িয়ে পড়লে (লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি) এটি একটি গুরুত্বর ধাপ বলে বিবেচিত হয়।
তবে, আশার কথা হল কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার পরবর্তী ফলাফল অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় অনেক ভালো। এমনকি গুরুত্বর পর্যায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরাও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে সন্তোষজনক জীবন যাপন করতে পারে।
সচেতন হতে হবে
=> আপনার সচেতনতাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে।
=> একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে ক্যান্সার যদিও একটি কঠিন রোগ, কিন্তু এর উপযুক্ত চিকিৎসা আছে। এক্ষেত্রে রোগীর সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষ হাকিম, কবিরাজ, ঝাড়-ফুঁকের উপর বিশ্বাস করছে, যেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ রয়েছে।
=> সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ খুবই কম। রোগীদের কোন রোগ সম্পর্কে পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে পরামর্শ না করে ন্যূনতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করা হলো।
=> রোগ যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যায়। তাই সচেতনতার পরিচয় দিন, সুস্থ্য থাকুন।
চিকিৎসা
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা হল এক কথায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচারের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনও অধ্যয়নরত। যে কোনো ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি শব্দ বিশ্বে বহুল প্রচলিত, তা হল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার জন্য সার্জন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ক্যান্সার কেয়ার নার্সের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
রেফারেন্সঃ