ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে বর্ষায় ত্বকের যত্ন নেবেন, জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
গরম, আর্দ্রতা এবং ভাপসা আবহাওয়ার সময় ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব আরও বেড়ে যায়। এছাড়া, অতিরিক্ত চুলকানি এবং বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের ভয় রয়েছে। তাই বর্ষাকাল ত্বকের জন্য খুব একটা উপকারী নয়।
শরীরের ভাঁজ এবং যেসব জায়গায় বেশি ঘাম হয় বা গরম হয়, যেমন উরু বা বগলের ভাঁজ, স্তনের নিচে, পশ্চাদ্দেশে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয়। এর কারনে চুলকানির সাথে লালচে ভাব দেখাবে। ঘোলা পানিতে বা নোংরা পানিতে খালি পায়ে হাঁটা পায়ের তলায় বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝে ছত্রাক হতে পারে। একে সাধারণ বাংলায় বলা হয় হাজা বা পচা পা। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।
ব্রণ প্রধানত বর্ষাকালে কিশোর-কিশোরীদের প্রভাবিত করে। তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ব্রণ হতে পারে। বর্ষাকালে প্রকৃতিতে মশা, মাছি এবং বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি হয়। অ্যালার্জি, ত্বকের ফোস্কা, বা লাল দানা হতেও দেখা যায়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এগুলো বেশি দেখা যায়।
বর্ষায় ত্বকের যত্ন
সারা বছরই ত্বক সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় যে কোনো সময় সানস্ক্রিন ক্রিমের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত নয়। ক্ষতিকর সূর্যালোক অল্প সময়ের জন্য হলেও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। একটি জিনিস প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, আর তা হচ্ছে সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
তৈলাক্ত ত্বক: পানির পরিমান যথেষ্ট আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সানস্ক্রিনের এসপিএফ অবশ্যই ৩০ মাত্রার অধিক আছে সেগুলো ব্যবহার করবেন।
শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক: রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য একটি ময়েশ্চারাইজিং সানস্ক্রিন বেছে নিন। এসপিএফ ৩০ মাত্রার অধিক আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
সাধারন ত্বক: ৩০ থেকে ৫০ এসপিএফ স্তরের সানস্ক্রিন ভালো কাজ করে। এমনকি ত্বক ঘামতে থাকলেও সানস্ক্রিন ত্বকে থাকবে।
সানস্ক্রিন কেনার আগে, আপনাকে অবশ্যই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। অনেকেরই ত্বকের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। যেসব সানস্ক্রিনে অক্সিবেঞ্জোন, রেটিনাইল পালমিটেট এবং প্যারাবেন্স থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ এই ধরনের উপাদান ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
তানজিমা শারমিন, রূপবিশেষজ্ঞ
হিয়ারোবিক্স ব্রাইডাল।
সচেতনতা বাড়াতে হবে
– এই সময়ে ভারী জামা-কাপড় পরবেন না, এবং হালকা রঙের সুতি পাতলা কাপড় পরুন। পড়নের কাপড় ঘামে ভিজে গেলে দ্রুত বদলে ফেলুন। ভেজা কাপড় পরনে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
– প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করুন। গোসলের সময় আপনি জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনি ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজে যান, আপনার ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
– এই সময়ে সারাদিন জুতা ও মোজা না পরে বরং হালকা চপ্পল বা খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটবেন না। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয় তাই রাস্তাঘাট এখন নোংরা পানি জমে আছে। এই নোংরা পানি থেকে পায়ের ত্বককে রক্ষা করুন। কারণ এই পানিতে রয়েছে হাজার রকমের জীবাণু।
– ভেজা চুল ভালো করে শুকিয়ে নিন তারপর বাঁধুন, না হলে মাথার ত্বকে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে।
– বাড়িতে কারও ছত্রাক সংক্রমণ আছে এমন রোগীদের থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখুন।
ডা. মো। মনিরুজ্জামান খান, চর্মরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল
বৃষ্টির এই সময়টাতে যেসব ফল পাওয়া যায় সেগুলো খেতে হবে। বেল, কলা, পেয়ারা, শসা, টমেটো, গাজর, লেবু এবং জাম্বুরা ত্বকে প্রাণ সঞ্চার করে। এছাড়া খালি পেটে ছোলা বা মুগ ডাল ভেজানো খেলে ত্বক জীবাণুমুক্ত থাকবে। যদিও এগুলি খুব ব্যয়বহুল নয়, তবে তাদের কিন্তু পর্যাপ্ত পুষ্টিগুন রয়েছে।
রেফারেন্সঃ